রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় একটি সুপার শপে দুই বছর বয়সী সন্তানের জন্য ফর্মুলা দুধ কিনতে এসেছিলেন মো. আবু সুফিয়ান। তিন মাস আগে যে দামে পণ্যটি কিনেছিলেন এখন সেই একই পণ্যের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। ক্ষুব্ধ এই ক্রেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিশুখাদ্যের দাম দিনকে দিন নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু বাচ্চার খাবার তো কিনতেই হবে, তা যতই বৃদ্ধি পাক। সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রাখা উচিত।’
গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন মাস ধরে শিশুখাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এই দাম আরও বাড়তে পারে বলে তারা জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিশুখাদ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এ ছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের শিশুখাদ্যের পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় দাম বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত তিন মাসে বিভিন্ন ধরনের ফর্মুলা দুধ, নুডুলস, সুজি, বিস্কিট, চকলেট, ওটস-এর দাম ২০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দেড়শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দাম বৃদ্ধির অজুহাতে শিশুরা যদি তাদের পর্যাপ্ত খাবার খেতে না পারে তবে তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে।
রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ও বাজার ঘুরে জানা যায়, বাজারে থাকা সব ধরনের শিশুদের খাওয়ার উপযোগী গুঁড়োদুধের দামই বেড়েছে। বেড়েছে তরল দুধের দামও। এর মধ্যে ন্যান কোম্পানির ৪০০ গ্রামের কৌটা এখন ৯২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে বিক্রি হতো ৮২০ টাকায়। সেরিল্যাক্স ৪০০ গ্রামের কৌটা আগে ৪০০ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা ৪৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ল্যাকটোজেনের ৪০০ গ্রামের কৌটা এখন ৬৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আগে বিক্রি হতো ৫৯০ টাকায়। নিডোর ছোট প্যাকেট আগে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হতো এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫ টাকায়। পিডিয়া সিউর আগে বিক্রি হতো ৭৩৫ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ টাকায়। বায়োমিলের ৪০০ গ্রামের কৌটার দাম এক বছর আগে ছিল ৫৫০ টাকা এখন তা ৬৩০ টাকা। এর বাইরে অন্য শিশুখাদ্যের মধ্যে ক্যালোগজ চকোজের মাঝারি আকৃতির প্যাকেট ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ওটস-এর বড় কৌটা আগে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হতো এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ টাকায়। শিশুদের অন্য খাবারের মধ্যে নুডুলস ও সুজির দামও বেড়েছে। ম্যাগি ও মি. নুডুলস এক বছর আগে যে প্যাকেট ১২০ টাকায় বিক্রি হতো তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি সুজির দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, এই পণ্যগুলো বেশির ভাগই দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। শিপিং খরচ ও বৈশ্বিক সংকটকে অজুহাত দেখিয়ে কোম্পানিগুলো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়াও যাচ্ছে না। এ কারণে শিশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
মিরপুর ১২ নম্বরের পল্লবী আবাসিক এলাকার এক মুদি দোকানি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগের মতো পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক নেই। আবার রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধাবস্থার কারণে পণ্য আমদানিতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। এ অজুহাতে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব পণ্যের দাম শিগগিরই আবার বাড়তে পারে বলে তিনি জানান। শিশুখাদ্যের এই দাম বৃদ্ধিতে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে কয়েকজন ক্রেতা জানান, ফর্মুলা দুধের দাম তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, আগে যে পরিমাণে কিনতেন তা থেকে এখন কম কিনতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এমনটি করলে বাচ্চার পুষ্টিহীনতা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে তারাও উদ্বিগ্ন। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরশীলতাও কমানো প্রয়োজন। যদিও কিছু কোম্পানি শিশুখাদ্যের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর জন্য কিছুদিন থেকে চেষ্টা করছে কিন্তু ট্যাক্স কমানো হলে দেশে দুগ্ধজাত পণ্যের যে উৎপাদন তা ব্যাহত হতে পারে। দুগ্ধজাত পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে সরকারকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ট্যাক্স ব্যবস্থাকে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। এতে উৎপাদনও ব্যাহত হবে না, আবার মূল্যও নাগালের বাইরে যাবে না।