তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মালিকানাধীন রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ-সহ দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি পাঠিয়ে অনুমতি ছাড়া ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে কি-না, সেই ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।
তবে সাকিব আল হাসানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ বলছে, যে ধারণা থেকে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে, সে রকম কোনো ব্যবসার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি জড়িত নয়। তারা এটি ব্যাখ্যা করে কমিশনকে জানাবে।
গত এপ্রিল মাসে স্বর্ণ আমদানি করে সেগুলো গোল্ড বার হিসাবে বিক্রি করার ঘোষণা দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তাতে তার প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ একটি লাইফ স্টাইল কোম্পানির মাধ্যমে ‘সুইস মেড ২৪ ক্যারেট মিন্টেড গোল্ড বারস’ বিক্রি করার কথা বলা হয়। যেখানে এক থেকে ১০০ গ্রামের স্বর্ণের বার কেনার সুযোগ থাকবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান নিজেই। এছাড়া বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘তারা যে ধরনের ব্যবসা করছেন, তার একটি বিষয় নিয়ে আমাদের এখানে কিছু তথ্য এসেছিল যে, এরকম দুটি বা তিনটি প্রতিষ্ঠান ট্রানজেকশন করছে। হুইচ ক্যান বি ক্লাসিফাইড এস কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। সেটা কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কি না, তা জানার জন্য তাদের কাছে আমরা আরও বিস্তারিত জানতে চেয়েছি।’
‘কারণ কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কেবলমাত্র বাংলাদেশে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষেই খোলা সম্ভব। তারা সেটি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হিসাবে চালু করেছে, না কি অন্য কোনোভাবে চালু করেছে, সেটা বোঝার জন্য আমরা আরও তথ্য চাওয়ার চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা করার নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবেই নেই। কিন্তু আমাদের কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ডেফিনিশনের ভেতরে যদি পড়ে, সেক্ষেত্রে আমাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে।’
কমোডিটি এক্সচেঞ্জকে ভবিষ্যতের বাজার বলে বর্ণনা করা যায়। যদি কোনো পণ্য বর্তমান বাজার দরের ওপর নির্ভর না করে ভবিষ্যতে কোনো দরে বা দামে ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি করা হয়, সেটা যে আইনি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, তাকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বলা হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাংলাদেশে এখনো তা গড়ে ওঠেনি। তবে গত এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ তৈরির জন্য এসইসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। সেখানে শেয়ার, বন্ড ইত্যাদি ভবিষ্যতের দরে কেনাবেচা হবে। এর ফলে বাজারে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। কৃষি পণ্য, খনিজ দ্রব্য, বন্ড বা সিকিউরিটিজও এভাবে লেনদেন করা হতে পারে।
কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এরপর থেকেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার বিষয়টি নজরে আসে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের।
গত ১৬ মে রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ এবং বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানকেও চিঠি পাঠিয়ে এসইসি তাদের ব্যবসার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, সদস্যভুক্ত কোনো ব্যক্তি ব্যতীত, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোনো সিকিউরিটিজের জন্য ব্রোকার বা ডিলার হিসাবে কাজ করতে পারবে না।
কিন্তু সম্প্রতি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পত্রিকায় দেয়া ব্যবসা প্রস্তাব তাদের নজরে এসেছে। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য না হলে কীভাবে তারা এই ধরনের ‘কমোডিটি ফিউচার ন্যাচার কন্ট্রাক্ট’ ব্যবসার প্রস্তাব দিয়েছেন, ৭ দিনের মধ্যে তা ব্যাখ্যা করার অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে রিলায়েবল কমোডিটিজ এক্সচেঞ্জ লিমিটেডর ব্যবস্থাপনা পার্টনার রাশেক রহমান বলছেন, ‘কমিশন আমাদের ব্যবসার বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে। সেটা আমরা দুই একদিনের মধ্যেই জানিয়ে দেবো।’
তিনি ধারণা করছেন, নামের কারণে এরকম একটি ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হতে পারে। রাশেক রহমান বলেন, ‘আমরা স্বর্ণ আমদানি করে বিক্রি করে থাকি। আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিতে হয়, বিক্রি করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। এসব লাইসেন্স আমরা নিয়েছি। এছাড়া স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য আর কোনো অনুমোদনের বিষয় নেই।’
সাকিবের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পার্টনার আরও বলেন, ‘এসইসি জানতে চেয়েছে, আমরা ভবিষ্যৎ দামে স্বর্ণ বিক্রি করি কি না? এর উত্তর হচ্ছে, আমার করি না। ভবিষ্যৎ ধারণা নির্ভর কোনোরকম পণ্য বা তার মূল্য নির্ধারণ করে কোনোরকম ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে আমরা জড়িত নই।’
আর এটা তারা চিঠি দিয়েই এসইসিকে জানিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি। সূত্র- বিবিসি।