শিক্ষা ছুটি নিয়ে পাঁচ বছরের জন্য বিদেশে গিয়েছেন। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেতন-ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। ছুটির চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে ফিরে এসে যোগদান করবেন। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো খবর নেই। এমনকি ১৩ বছরেও ফেরেননি কেউ কেউ।
ছুটি থাকাকালীন পূর্ণ আর্থিক সুবিধা নেওয়ায় এবং দেশে ফিরে না আসায় সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে উদারনীতি ও স্বজনপ্রীতিকেই দায়ী করছেন।
উচ্চশিক্ষা ও অর্জিত ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেননি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষকের সংখ্যা অন্তত চার। এই মুহূর্তে অন্তত ৬০ জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। তারা কে ফিরবেন, কে ফিরবেন না, তা নিয়ে দোলাচলে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ধারণা করা হচ্ছে, অনেকেই ইতিমধ্যে উক্ত দেশে স্হায়ী হওয়ার প্রক্রিয়া করেছেন। অর্থাৎ, তারা আর দেশে ফিরবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রকম সুযোগ-সুবিধা নিয়েও ছুটি শেষে শিক্ষকেরা সময়মতো না ফেরায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীরা। তথ্য অনুযায়ী, কৃষি প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান ২০১৫ সালে পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যান। ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। অথচ তিনি বেতন-ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসা. রোকসানা পারভীন স্বামীর সঙ্গে দেখা করার জন্য ২০০৯ সালে ছুটি নিয়ে আমেরিকায় গেলেও আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেননি। একই রকম ছুটি নিয়ে ২০১৩ সালে আমেরিকায় গেছেন কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিকা সনম। উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আরফান আলী উচ্চশিক্ষার জন্য ২০১৪ সালে সৌদি আরবে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।
এছাড়া মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈকত চৌধুরী পিএইচডি শেষ করে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরে বিদেশে চলে যান। ২০১৮ সালে কৃষিতত্ত্ব বিভাগের ড. মো. আসাদুজ্জামান এবং অ্যাগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগের হাসান মোহাম্মদ জুবায়ের উচ্চশিক্ষা শেষে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য পাঁচ বছর ছুটি নিতে পারেন। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিন মাস, ছয় মাস—এভাবে ছুটি নিতে পারেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন-ভাতা সবই পরিশোধ করে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটিতে বিদেশ গিয়ে আয়-উপার্জন করেন। শিক্ষক হিসেবে স্কলারশিপ পেতে তাদের সুবিধা হয় এবং দেশে না ফিরে স্হায়ী হয়ে যান বিদেশে। এটি দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একরকম প্রতারণা।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন মোটামুটি সবাই চলে আসছেন। ছুটি শেষ হলেই আমরা চিঠি পাঠাই। অননুমোদিত ছুটিতে যে চার জন রয়েছেন, তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। এক জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। বাকি তিন জনকে বারবার চিঠি দেওয়ার পরে তারা চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। এ বিষয়ে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ অব্যাহতি চাওয়া শিক্ষকদের ভোগকৃত অর্থের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হলে হিসেব-নিকাশ হবে। তাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ড রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের টাকা রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে তখন সমন্বয় করা হবে।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে না ফেরা শিক্ষকদের আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, জবাব পেয়েছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, শিগ্গিরই সিদ্ধান্ত হবে। আমি দায়িত্বে আসার পর ছুটি শেষ হওয়া শিক্ষকদের চিঠি ও আলটিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেছি। এখন থেকে একবারের বেশি পোস্ট ডক্টরাল করার ছুটি দেব না। স্টুডেন্টরা বসে থাকবে আর শিক্ষকেরা অনুমোদন ছাড়া ছুটিতে থাকবেন তা হবে না।’