কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মানছে না অনেক ইউনিট

Spread the love

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত ও আস্থাশীল দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মানছে না অনেক ইউনিট। ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগকে সম্মেলনের তারিখ দ্রুত কেন্দ্রে জমা দিতে বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ৭ মে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মে তিনি এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দেশনা দেওয়ার পর ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো তিনটি সংগঠনের কেউই তা জমা দেননি। অন্যদিকে বঞ্চিতদের সামাল দিতে না পারার আশঙ্কায় এক যুগ পর গত ২৮ মে চট্টগ্রাম দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষণা করেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এছাড়া তৃণমূলে একশ্রেণির নেতা যে যার মতো চলছেন। জুনিয়ররা মানছেন না সিনিয়রদের। কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক কথাবার্তাও বলছেন কেউ কেউ। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেক সিদ্ধান্তই মানছেন না একশ্রেণির দলীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতারা। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা।

স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের পোষ্যদের তৃণমূল আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতে না রাখার নির্দেশনা গত এক যুগ ধরে কয়েক দফা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ২০১৭ সালের ২০ মে দলের বর্ধিত সভায় অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে তৃণমূল নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দলের অনুপ্রবেশকারীদের তথ্য সংগ্রহে কড়া অবস্থানের কথা ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর কয়েক দিন পর অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে চিঠি ইসু্য করা হয়। কিন্তু এ নির্দেশ মানা হচ্ছে না।

এদিকে কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত দলীয় নেতাদের তথ্য চেয়েও পায়নি আওয়ামী লীগ। জেলা-উপজেলায় নিজস্ব কার্যালয় নির্মাণে দলের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি আজও। ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরিতে কেন্দ্রীয় নির্দেশ পালন করেনি তৃণমূল।

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এর দুই মাস পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই গঠিত হয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। ছাত্রলীগ সভাপতি নির্বাচিত হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। তবে এক বছর গড়াতেই অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অপসারণ করা হয়। শোভন-রাব্বানীকে অপসারণের পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্মেলন পেছাতে নতুন কৌশলে হাঁটছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বিভিন্ন ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নয়, প্রেস রিলিজ কমিটিতে ব্যস্ত ছাত্রলীগ।

২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ সংগঠনের মেয়াদ দুই বছর আগেই শেষ হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০০৪ সালের ৫ মার্চ। তখন নাজমা আক্তারকে সভাপতি ও অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অপু উকিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্র্নিবাচিত হন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ সংগঠনেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। তারাও দায়িত্ব ছাড়তে চান না বলে যুব মহিলা লীগের পদপ্রত্যাশী একাধিক নেত্রীর অভিযোগ।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি পদে ১০ জন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে দুজন দক্ষিণের বর্তমান সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে আবার একই পদে সমর্থন দিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এরা হলেন-তৌহিদ ইসলাম ও ফয়সাল মনসুর। সভাপতি পদে প্রার্থীরা হলেন-আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, পার্থ সারথী চৌধুরী, নাছির উদ্দিন মিন্টু, মোহাম্মদ ফারুক, শফি উল আজম শেফু, জহুরুল আলম, মাঈনুদ্দিন চৌধুরী এবং আকতার হোসেন। সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। এরা হলেন- মোহাম্মদ সোলাইমান, মর্তুজা কামাল মুন্সী, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রাজু দাশ হীরু, আবদুল হান্নান লিটন, সাইফুল হাসান টিটু, নুরুল আমিন, কাজী আলাউদ্দিন, আব্দুল মান্নান, বেলাল হোসেন মিঠু, মুরিদুল আলম মুরাদ, মিজানুর রহমান, জামিল উদ্দিন, এস এম আজিজ, আবু সাহাদাত সায়েম, মুসা তসলিম, ইয়াছিন আরাফাত, মোহাম্মদ হাসান, তাজুল ইসলাম, সাহাব উদ্দিন ও মাহবুবুর রহমান। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের এর আগে সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১০ সালে। আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরীকে সভাপতি ও পার্থসারথী চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সহযোগী সংগঠনসমূহ, মহানগর ও দুই মেয়রের যৌথ সভা কাল

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রদ্বয় এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকবৃন্দের এক মতবিনিময় সভা আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্হ্য সুরক্ষাবিধি মেনে যথাসময়ে উপস্হিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।