ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে অদিতাকে হত্যা, শিক্ষক রনির স্বীকারোক্তি

Spread the love

লক্ষ্মীনারায়ণপুরে অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্রী তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে (১৪) ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বালিশচাপায় হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে কোচিং শিক্ষক আবদুর রহিম রনি।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এদিন দুপুরে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে আসামি। অভিযুক্ত আবদুর রহিম রনি (৩০) নোয়াখালী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীনারায়ণপুর মহল্লার লাতু কাউন্সিলরের বাড়ির খলিল মিয়ার ছেলে।

এসপি শহীদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রনি নামে এক যুবকের কাছে প্রাইভেট পড়ত নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অদিতা। হঠাৎ করে অদিতা তার কাছে প্রাইভেট পড়তে অনীহা প্রকাশ করে এবং নতুন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে শুরু করে। এতে নাখোশ হয় রনি। এ বিষয়সহ অদিতার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানার জন্য তাৎক্ষণিক রনিকে প্রথমে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।’

এসপি বলেন, ‘অদিতার থুতনি ও ঘাড়ে নখের আঁচড়ের তাজা দাগ ছিল। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর নখের আঁচড়ের বিষয়ে রনিকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। আঁচড়ের ব্যাপারে তার কাছ থেকে কোনো সদুত্তর না পেলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। তখন তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আদালতে সোপর্দ করে ১০দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। রিমান্ডে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রনি ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।’

আসামির জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসপি শহীদুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে অদিতার বাসায় যায় সাবেক কোচিং শিক্ষক রনি। বাসায় গিয়ে বন্ধ দরজা নক করলে অদিতা বাসার দরজা খুলে দেয়। তখন সে বাসায় প্রবেশ করে অদিতার সঙ্গে গল্পগুজব করে। গল্পগুজবের এক পর্যায়ে রনি অদিতাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর রাগান্বিত হয়ে অদিতা বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার ভয়ে রনি অদিতাতে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে রান্না ঘর থেকে ছোরা এনে অদিতার বাম হাতের রগ এবং গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে হাতের বাঁধন খুলে দেয় রনি।’

এরপর আসামি রনি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঘরের আলমিরা ও ওয়ারড্রবের জামা-কাপড়, কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রুমের দরজা লক করে এবং মূল ঘরের দরজা বাহির থেকে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায় বলে জানান নোয়াখালীর এসপি।

প্রসঙ্গত, বৃহষ্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) জেলা শহর মাইজদীতে নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসমিয়া হোসেন অদিতাকে (১৪) গলাকেটে হত্যা করা হয়। নিহত শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরপর পুলিশের একাধিক দল পৃথক অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি সাবেক গৃহ শিক্ষক আবদুর রহিম রনি (৩০), ইসরাফিল (১৪) ও তার ভাই সাঈদ (২০) গ্রেফতার করে।

এদিকে, স্কুল ছাত্রী অদিতা হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে নোয়াখালীর শিক্ষাঙ্গন ও রাজপথ।