অভাবে বই কিনতে না পারা জাইমা পেলেন জিপিএ-৫

Spread the love

বই কিনতে না পারা যশোরের আবু জাইমা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। মেয়ের সাফল্যে দরিদ্র ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী আবু জাফরের মুখে হাসি, চোখে অশ্রু; আর মনে শঙ্কা মেয়েকে কলেজে পড়াতে পারবেন তো? মেধাবী মেয়ের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে তো?

যশোর শহরের মিশনপাড়া খ্রিস্টান কবরস্থান এলাকার আবু জাফর ও সুরাইয়া ইয়াসমিনের বড় মেয়ে আবু জাইমা। এবছর যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে। তার বাবা আবু জাফর পেশায় একজন ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিনী। পারিবারের দরিদ্রতা জাইমার শিক্ষাজীবনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। দারিদ্র্যের শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে জাইমা।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছিল জাইমা। এ কান্না দুঃখের নয়। জাইমার সর্বোচ্চ অর্জনে আনন্দে অশ্রু ঝরছিল।

আবু জাফর জানান, তার পরিবারে জাইমা ও দুই ছেলেসহ মোট পাঁচ সদস্য। তিনি ভ্যানে করে যশোরের ঝিকরগাছা, চৌগাছা, শার্শা থেকে ভাঙাড়ি সংগ্রহ করে তা শহরে এনে বিক্রি করেন। আর এই উপার্জনের ওপর নির্ভর করে চলে জাইমা ও দুই ছেলের পড়াশোনাসহ পুরো সংসারের খরচ।

তিনি বলেন, আমি ভ্যান চালিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে ভাঙাড়ি সংগ্রহ করে যশোরে এনে বিক্রি করি। এর থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে জাইমার পড়াশোনা চালিয়েছি এবং পুরো সংসারের যাবতীয় খরচ সামাল দিয়েছি। পড়াশোনার প্রতি জাইমার আগ্রহ থাকায় দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও আমি পিছপা হইনি। ধারদেনা করে আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগান দিয়েছি।

আবু জাফর মেয়ের ফলাফলে অনেক খুশি। মেয়ের স্বপ্ন সে চিকিৎসক হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করবে। কিন্তু ডাক্তারি পড়ানোর সামর্থ্য তার নেই। দিন আনা, দিন খাওয়া পরিবারে মেয়েকে কলেজে ভর্তি করিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তিনি।

জাইমার মা সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, আমার মেয়েকে গাইড বা প্রয়োজনীয় বই কিনে দিতে পারিনি। জাইমা ওর সহপাঠীদের কাছ থেকে বই ধার করে, অনলাইন থেকে বইয়ের পেজ ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পড়েছে। এমনকী পরীক্ষার আগে ফরম ফিলাপের এক হাজার ৪০০ টাকা চার-পাঁচজনের কাছ থেকে ধার করে নিয়ে দিতে হয়েছে। আমাদের মেয়ের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ আমাদের পিছপা হতে দেয়নি। তবে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ এবং পরবর্তী ধাপে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

জাইমা বলে, আমি জিপিএ-৫ পেয়ে অনেক আনন্দিত। করোনার সময় আমাদের পরিবারের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল, এর মধ্যে প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারিনি। তবুও আমি আমার পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি। আমার বাবা-মা আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে আমি ডাক্তার হতে চাই। তবে আমার পরিবার দরিদ্র হওয়ায় আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো কী না জানি না।

জাইমাদের প্রতিবেশী কামাল হোসেন বলেন, জাইমার পড়ালেখার প্রতি অনেক আগ্রহ। অসহায়ত্ব বা দারিদ্রতা কোনো কিছুই তাকে হার মানাতে পারেনি। মেয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও লক্ষ্যে পৌঁছাতে তার বাবার পক্ষে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেধাবী মেয়েটি তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করি।

এর আগে জাইমা জেএসসি ও পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ভালো ফলাফলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এবার মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছে। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে জাইমা।