সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসস্তূপের নিচে এভাবেই আটকে ছিল শিশু মরিয়ম ও তার ছোট বোন ইলাফ। ৩৬ ঘণ্টা পর গতকাল তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
উত্তর সিরিয়ার হারামের একটি গ্রাম থেকে ভূমিকম্পের ৩৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে দুই বোনকে। তাদের উদ্ধারের ঠিক আগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে উদ্ধারকর্মীদের উদ্দেশে তাদের কাকুতিমিনতি করতে দেখা যায়।
কয়েক দফা ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে তুরস্ক ও সিরিয়ায় গতকাল বুধবার আরো জোরদার করা হয়েছে উদ্ধার অভিযান। শিশুসহ অনেক মানুষকে ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা পরও উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আহত বা আটকে পড়াদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে আসছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সিরিয়ার গ্রামের ঘটনায় আটকে পড়া বড় বোনটি উদ্ধারকারীদের বলছিল, ‘আমাকে এখান থেকে বের করো। তোমার জন্য সব কিছু করব। আমি তোমার চাকর হয়ে থাকব।’ উদ্ধারকারীরা জবাবে বলেন, ‘আরে, না না।’
বাঁচার জন্য মর্মস্পর্শী এ আর্তি জানানো মেয়েটির নাম মরিয়ম। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, মরিয়ম তার ছোট বোনটিকে আগলে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে চাপাচাপি করে কোনো রকমে শুয়ে আছে। সম্ভবত তারা বিছানায়ই চাপা পড়েছিল।
ছোট মেয়েটির নাম ইলাফ। তাদের বাবা মুস্তাফা জুহির আল-সাঈদ বলেন, ভোররাতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর তাঁরা বুঝতে পারেন মাটি কাঁপছে। ছাদের পলেস্তারা খসে মাথায় পড়তে শুরু করেছে।
‘আমরা দুই দিন ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচেই আটকে ছিলাম। এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম যা আর কারো জীবনে না আসুক, সেটাই চাই’, বলেন মুস্তাফা আল-সাঈদ।
আল-সাঈদ জানান, চাপা পড়া অবস্থায় তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা উচ্চৈঃস্বরে দোয়াদরুদ পড়ছিল যেন কেউ না কেউ তাদের আওয়াজ শুনতে পায়।
মরিয়ম ও ইলাফকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে কম্বলে মুড়িয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।
উদ্ধারে মরিয়া চেষ্টা চলছে : সিরিয়ায় উদ্ধার অভিযানে যুক্ত যুক্তরাজ্যের এক স্বেচ্ছাসেবী বিবিসিকে বলেন, ‘সময় শেষ হওয়ার আগে আমরা যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিটি মিনিট গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা ক্ষীণ হয়ে আসছে।’
ওই স্বেচ্ছাসেবী আরো বলেন, ‘এ কারণেই আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত উত্তর সিরিয়ায় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানাই। জরুরি ভিত্তিতে আমাদের আরো বিশেষায়িত সরঞ্জাম প্রয়োজন। অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য তেল প্রয়োজন।’
বাবা, ঠাণ্ডায় হাত সাদা হয়ে গেছে : ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু কাহরামানমারাসে এক ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকে ছিল পাঁচ বছর বয়সী ইয়াগমুর। তার পরিবারকে আগেই উদ্ধার করা হয়। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রায় উদ্ধার প্রচেষ্টাকালে শিশুটি বলে, ‘বাবা, ঠাণ্ডা। আমার হাত সাদা হয়ে গেছে।’
মেয়ের বাবা তাকে বলেন, ‘তারা গর্ত খুঁড়ছে। তোমার খুব কাছেই আছে।’ কিছুক্ষণ পর মেয়েটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, বিবিসি ও সিএনএন