অ্যাডিনোভাইরাস কেন এত ভয়ংকর?

Spread the love

ভারতের কলকাতার সর্বত্রই হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত শিশু রোগীতে। এর পেছনে রয়েছে পুরনো ও চেনা অ্যাডিনোভাইরাস। কিন্তু এ বছর এই ভাইরাস কেন এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকরা। মূলত শিশুদের ক্ষেত্রে এ ভাইরাস করোনার মতো মহামারি পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতা ও এর আশপাশের শহরগুলো তো অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সব জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, শহরে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।

২ বছর পর ফিরে আসা অ্যাডিনোভাইরাসের মিউটেশনের মাধ্যমে জিনগত কোনো পরিবর্তন ঘটেছে কী না, ইতোমধ্যেই তা জানার চেষ্টা করছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)। জানা যায়, রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে সারাবছর নাইসেডে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের (রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) ওপরে নজরদারি চালানো হয়। এ নিয়ে তারা এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে উদ্বেগের ছবি। জানা যায়, ডিসেম্বরে এ ভাইরাসে আক্রান্তের হার ছিল ২২ শতাংশ, জানুয়ারিতে ছিল ৩০ শতাংশ এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে তা ৩০ শতাংশের বেশি।

নাইসেডের মুখপাত্র শান্তা দত্ত বলেন, এ রাজ্যে হঠাৎ অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ কেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ফোন আসছে। বিষয়টি জানতে ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে।

সাধারণ শয্যা ছাড়াও পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে প্রতিনিয়ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই ইউনিটে এক থেকে দুই বছরের শিশুর সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকে জানানো হয়, রাজ্যে করোনার সময় শিশুদের চিকিৎসার জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছিল তা যেন পুরোপুরি কাজে লাগানো হয় সে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অযথা যেন কোন শিশুকে রেফার করে শহরের হাসপাতালগুলোতে চাপ সৃষ্টি করা না হয়। প্রতিদিনই নমুনা পাঠাতে হবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কী করণীয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সে বিষয়ে আবারও আলোচনা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। খোলা হয়েছে ফিভার ক্লিনিক। যদিও সেই হাসপাতাল চত্বরে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন সেখানকার রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। তিনি বলেন, অযথা আতঙ্ক তৈরির কোনও প্রয়োজন নেই। ভিতরে ঢুকলে শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে যাবে। যদিও অ্যাডিনোভাইরাস ইতোমধ্যেই কোভিড পরবর্তী নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে বলেই মত অধিকাংশ চিকিৎসকের।

তবে বয়স্কেদেরও আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কম নয়। তাদের শ্বাসনালির উপরিভাগ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তারা জ্বর ও দীর্ঘ দিন ধরে কাশিতে ভুগছেন।

শহরের এক হাসপাতের শিশু চিকিৎসক বলেন, ২ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের অতি দ্রুত রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন হচ্ছে। অনেকের শারীরিক অবস্থা এত দ্রুত খারাপ হচ্ছে যে, ভেন্টিলেশন কিংবা অন্যান্য কৃত্রিম উপায়ে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের শিশুরোগ চিকিৎসক শান্তনু রায়ের মতে, মিউটেশনের কারণেই অ্যাডিনোভাইরাস এত বেশি সংক্রামক ও ভয়ানক বলে মনে হচ্ছে। আগে এই ভাইরাসে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা বেশি পাওয়া যেত না। এ বার সেটি মারাত্মক বেশি। মেনিনজাইটিসও হচ্ছে।

ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ কোভিশিল্ড নিয়েছেন। এর মাধ্যমে শিম্পাঞ্জির মডিফায়েড (পরিবর্তিত) অ্যাডিনোভাইরাস ‘ভেক্টর ভাইরাস’ মানবশরীরে প্রবেশ করেছে। রেপ্লিকেট (বিভাজিত হয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি) করতে অপারগ এই ভাইরাস কোষের মধ্যে থেকে করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন তৈরিতে নিয়োজিত থাকার কথা। সিদ্ধার্থ বলেন, বর্তমানে মানবশরীরে এই মডিফায়েড ভাইরাস আছে কী না, থাকলেও সর্দি-কাশি তৈরি করে, এমন অ্যাডিনোভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক কী, তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। কাজটা কঠিন হলেও জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমেই উত্তর পাওয়া যেতে পারে।