বিয়েতেও প্রতারণা আরাভের, প্রথম স্ত্রী নিখোঁজ

Spread the love

পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আলোচিত আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের প্রথম স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়ার বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামে। আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে আপন পরিচয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন, তারপর বিচ্ছেদ।

পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামিও হয়েছেন তার প্রথম স্ত্রী। মামা শ্বশুরের মোটরসাইকেলে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। তবে সুসম্পর্ক ছিল না শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে।

অপরদিকে, পুলিশ পরিদর্শক হত্যাকাণ্ডের পর স্ত্রী কেয়ার সঙ্গে আরাভের বিচ্ছেদ ঘটে। এই প্রতারকের বিষয়টি সামনে আসার পর অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, মায়ের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করার সময় ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন কেয়া। ভর্তি হন ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজের প্যাথলজি বিভাগে। কলেজে গিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আপন ওরফে আরাভের সঙ্গে। ২০১৪ সালে কেয়া গ্রামে বেড়াতে আসেন। এর একদিন পর এক বন্ধুকে নিয়ে কেয়াদের বাড়িতে আসেন আরাভ। পরদিন কেয়ার মামার একটি মোটরসাইকেল ও কেয়াকে নিয়ে পালিয়ে যান আরাভ। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে তারা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। মোটরসাইকেল আর মেয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কেয়ার পরিবারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক ছিল না।

কেয়ার মামা গাড়াডোব গ্রামের কামরুজ্জামান বলেন, ‘মেয়ের বন্ধু হিসেবে তাকে আমরা যথেষ্ট সম্মান করতাম। কিন্তু সে যে এত বড় প্রতারক তা আগে জানা ছিল না। সে নিজেকে আপন জুয়েলার্সের মালিক পরিচয় দিয়েছে। আবার আমার শখের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাকে অনুনয় করলেও মোটরসাইকেল ফেরত দেয়নি, তখন গাংনী থানায় একটি জিডি করেছিলাম। এই জিডি তুলে নিতে সে মেহেরপুরের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে আমাকে চাপ দিয়েছিল। ওই নেতাদের কাছে আরাভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে আমাকে চাপ দিতে বলেছিল।’

ভাগ্নি কেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়েটির জীবন তছনছ করে দিয়েছে সে। আরাভের সঙ্গে থাকার কারণে সে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি।’ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কেয়াকে সুন্দর জীবনে ফেরার সুযোগ করে দিতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

কেয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, কেয়ার মা তার খালাতো বোন। বাড়িও পাশে। তার নাম মনোয়ারা বেগম। ১৯৯৬ সালে মনোয়ারা বিএ পাস করলে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরপর থেকে তাদের সংসার জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০০০ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আপন ভাই হত্যা মামলায় জেল হয় তার। তখন কেয়ার বয়স মাত্র তিন বছর। মাঝে মাঝে মেয়েকে নিয়ে দেখতে জেলে যেতেন তার স্ত্রী। কিন্তু দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে তাদের সংসারে ফাটল ধরে। এরই মাঝে বড় হতে থাকে কেয়া। ২০১১ সালে জেল থেকে বের হয়ে আসেন। এসে শোনেন স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাগজপত্র দেননি। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারেননি। স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন বিয়ে করেন উজলপুর গ্রামের একজনকে। পরে তারা ঢাকায় চলে যান। ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন কেয়া। তার মা তাকে বাবার অমতে ভর্তি করে দেন ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজে। সেখানে চিকিৎসাবিদ্যায় ডিপ্লোমা করতেন কেয়া। তারপর থেকেই মেয়ের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই আবুল কালামের।

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পরই শুনতে পান তার মেয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছেন আপন নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সে নাকি আপন জুয়েলার্সের মালিক। বিয়েও হয় তার সঙ্গে। ২০১৪ ও ১৫ সালে স্বামী আপনকে নিয়ে গাড়াডোব গ্রামে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে আসে। তখন বিলাসবহুল জীবনযাপন করতো তারা। কিন্তু বিভিন্ন মারফত জানতে পারি, তার স্বামী সন্ত্রাসীকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এরপরই কিছু দিন যেতে না যেতেই খবর আসে কেয়া একটি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। পরে জেলেও যেতে হয় তাকে। জামিনের পর তাদের বিচ্ছেদ হয়। দীর্ঘ কয়েক বছর হাজতবাস করার পর ২০২২ সালে জামিনে মুক্তি পায় সে। পরে সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের শাহিন নামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়। তার পরপরই সে স্বামীর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় চলে যায়।’

গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুরাইয়া আক্তার কেয়া সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ হত্যা মামলায় সে জামিনে ছিল বলে জানতে পেরেছি। তবে সে আসলে কোথায় আছে, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি।