‘বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না’, কারাগারে পাঠিয়ে দেবো

Spread the love

মানিকগঞ্জের মো. রুবেল (২২) হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানাকে ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট বলেছেন, আদালতের কাছে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না। একদম কারাগারে পাঠিয়ে দেব।

সোমবার (৩ এপ্রিল) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।

শুনানির শুরুতে হত্যা মামলা ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আপনার মতো পুলিশ অফিসার দরকার। আপনি মাত্র ৪২ ঘণ্টায় হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করলেন? এ সময়ের মধ্যে কখন সাক্ষী নিলেন, কখন ঘুমালেন, কখন খাওয়া-দাওয়া করলেন তা আমাদের দেখান। আর কতটি মামলা আপনি তদন্ত করেছেন, সেগুলো কত সময়ে শেষ করেছেন তার তালিকা জমা দেন।

জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, এটা আমার প্রথম তদন্ত। এরপর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী বলেন, অভিযোগপত্র দ্রুত দিলেও সমস্যা। আবার দেরি করে দিলেও সমস্যা।

তখন আদালত বলেন, তাহলে আমরা একটা মক ট্রায়াল করি। কত দ্রুত অভিযোগপত্র দিতে পারেন, সেটা আমরা দেখতে চাই।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সেটা দেখার এখতিয়ার আপনাদের আছে। একপর্যায়ে দাখিল করা নথিতে আদালত দেখতে পান মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার মামলার একটি তদন্ত প্রতিবেদন রেফারেন্স হিসেবে নথিতে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানাকে ভর্ৎসনা করে আদালত বলেন, কেন আপনি এটা দিলেন। আপনার কাছে তো রেফারেন্স চাওয়া হয়নি। বেশি স্মার্টনেস দেখাচ্ছেন। নিজেকে বেশি স্মার্ট মনে করেন? কোর্টের সঙ্গে বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না। একদম কারাগারে পাঠিয়ে দেব।

এরপরে আদালত এই মামলার শুনানি দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করেন। এ সময় আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে গত ২ মার্চ ‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপে একটি জাতীয় দৈনিক। সেই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা ৫ মার্চ ওই আবেদন করেন। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে ভাই–বোন। আর নিহত রুবেল সোহেলের ভগ্নিপতি।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।

শুনানিতে শিশির মনির আদালতে বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ওই হত্যার ঘটনার পর ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা হয়। মামলা দায়েরের ২৩ ঘণ্টার মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সুরতহাল প্রতিবেদন, আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং ১৩ জনের সাক্ষী নেওয়ার পর ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সবকিছু এক দিনের মধ্যেই হয়ে গেছে। তাই কার্যধারার সঠিকতা নির্ণয় করা প্রয়োজন।

শুনানি শেষে আদালত বলেন, এত তাড়াতাড়ি অভিযোগপত্র হতে দেখিনি। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে, অস্বাভাবিক গতিতে তদন্ত হয়েছে। আধা ঘণ্টা করে হলেও ১৩ জনের সাক্ষী নিতে সাড়ে ৬ ঘণ্টা লাগার কথা। আগে থেকে তৈরি করা, সবাই এসে দিয়ে গেল মনে হচ্ছে। তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) আসুক, শুনি। এরপর তাকে তলব করা হয়। সেই তলব আদেশে তিনি আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।