স্বপদে বহাল দুর্নীতিবাজ ৩৯ আওয়ামী বিচারপতি

Spread the love

 

দুর্নীতিবাজ ৩০ বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবীরা। দুর্নীতিবাজ ও দলকানা আওয়ামী বিচারপতিদের দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতি বরাবর।
গতকাল সোমবার ‘সাধারণ আইনজীবী’ ব্যানারে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়। এর আগে আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধন থেকে দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় আগামী ১৮ অক্টোবর দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের ছবিসম্বলিত নামের তালিকা সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানিয়ে দেয়া হবে। তাদের পদত্যাগ কিংবা অপসারণে পদক্ষেপ নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

মানববন্ধন শেষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ ও সৈয়দ মামুন মাহবুবের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদকে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আমরা আপনাকে জানাতে পেরে গর্বিত যে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনার গৌরবময় মিশন এবং দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হলো ‘জুলাই বিপ্লব-২০২৪’ এর ঐতিহাসিক এবং অনন্য বিপ্লবের ফসল। তাজা রক্তের বিনিময়ে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আপনি এখন আমাদের বিচার বিভাগের অভিভাবক। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে হাইকোর্ট বিভাগ ও বিচার বিভাগীয় প্রশাসন এবং অধঃস্তন বিচার বিভাগে বিচারক হিসেবে বসতে থাকা মানুষগুলোকে যারা (কিছু বিচারক) ফ্যাসিবাদী শাসনের সমর্থক ও সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। বিচারকের আসনে যখন আমরা তাদের দেখতে পাই তখন আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এসব বিচারক দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত ছিলেন। তাই বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে আপনাদের কাছে আমাদের প্রথম ও প্রধান অনুরোধ এবং দাবি জানাচ্ছি, যে রক্তের ঋণ শোধের জন্য ‘জুলাই বিপ্লব-২০২৪’ সংঘটিত হয়েছিল তার জন্য রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতা ও দুর্নীতির ভিত্তিতে এসব দলবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের অবিলম্বে তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। যাতে করে ‘জুলাই বিপ্লবে’ প্রাণ উৎসর্গ ও রক্তের বলিদানকারীকে জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।

এদিকে আওয়ামী আমলে নিয়োগ পাওয়া দলকানা-দলদাস ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতিদের কয়েকটি তালিকা করা হয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে তালিকাগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘এখনো অক্ষত থরে থরে সাজানো উচ্চ আদালত। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনকে যারা অন্ধ সমর্থন দিয়েছিলেন সেই বিচারপতিরা এখনো বহাল। তারা শুধু হাসিনার মাফিয়াতন্ত্রের স্তাবক-সমর্থকই ছিলেন না, ছিলেন ফ্যাসিবাদের দোসর। আ.লীগ সরকার তাদের নিয়োগই দেয় ঠিকুজি-কুষ্ঠি দেখে, আওয়ামী লীগ দেখে। ফলে হাসিনার নিপীড়নযন্ত্র হিসেবে বিচারের নামে মানুষকে পীড়া দিয়েছেন। সংবিধান সমুন্নত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে সংঘটন করেছেন বিচারিক অপরাধ। এ কারণে বিচারপতি নামধারী হাসিনার দলদাসদের শুধু চাকরিচ্যুতিই নয়, আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করার দাবি ভুক্তভোগীদের। কথিত এসব বিচারপতিদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং হাসিনা বন্দনার ইতিহাস বিচারাঙ্গনে সর্বজনবিদিত। আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সব বিচারপতিই দুর্নীতিগ্রস্ত। এই আইনজীবী দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারপতির একটি ‘শর্টলিস্ট’ও প্রকাশ করেন। তাতে হাইকোর্ট বিভাগের ৩৯ বিচারপতির নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেনÑ বিভাগের বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি এম আর হাসান, আব্দুর রব, শেখ মো. জাকির হোসেন, গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর, এ কে এম জহিরুল হক, শেখ হাসান আরিফ, খসরুজ্জামান, বিচারপতি রূহুল কুদ্দুস বাবু, এস এম কুদ্দুস জামান, খিজির হায়াত, মোস্তফা জামান ইসলাম, মো. বদরুজ্জামান, বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকার, বিচারপতি জেবিএম হাসান, বিচারপতি জাফর আহমেদ, সহিদুল করিম, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান, বিচারপতি ইকবাল কবির, মো. সেলিম, রিয়াজ উদ্দিন খান, বিচারপতি খায়রুল আলম, শশাঙ্ক শেখর সরকার, এস এম মনিরুজ্জামান, সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর, শাহেদ নূরউদ্দিন, মো. আখতারুজ্জামান, ইজারুল হক আকন্দ, মো. মুজিবর রহমান মিয়া, কে এম জাহিদ সারোয়ার কাজল, খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, কাজী জিনাত হক, মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার, বিশ্বজিৎ দেবনাথ, কে এম ইমরুল কায়েশ, এ কে এম রবিউল হাসান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম এবং এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অবিলম্বে তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে এক এক করে তাদের ‘আওয়ামী আমলনামা’ প্রকাশ করা হবেÑ মর্মে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই আইনজীবী।