নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন: আয়নাঘরের ভয়ংকর দুঃস্মৃতি

Spread the love

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের বেরিয়ে এসেছে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আয়নাঘর নামে পরিচিত গোপন কারাগারে রাজবন্দিদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের কাহিনি। নির্যাতন সইতে না পেরে আয়নাঘরের কোনো কোনো বন্দি প্রায় উন্মাদ হয়ে গেছেন। কেউ মৃত্যুবরণও করেছেন। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই বন্দিশালা থেকে ছাড়া পেয়েছেন কয়েকজন। তাদের অনেকেই শেখ হাসিনার আক্রোশের শিকার হওয়ার গল্প শুনিয়েছেন।

মূলত ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। বেছে নেন দমন-পীড়নের পথ। ক্ষমতায় টিকে থাকতে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি ব্যবহার করেন রাষ্ট্রযন্ত্রকে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব মতে, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জন গুম হয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টায় জোরপূর্বক গুম করা ছিল তার নেওয়া কৌশলগুলোর অন্যতম। এ অপচেষ্টায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে অপহৃত শত শত মানুষের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে সাধারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, যেমন বিক্ষোভ-সমাবেশ আয়োজন, রাস্তা অবরোধ, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ কোনো মন্তব্য করার জন্য।

ভুক্তভোগীদের অনেককে মেরে ফেলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদের কণ্ঠ রোধ করতে আয়নাঘরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে। সেখানেও মারা গেছেন অনেকে। সৌভাগ্যক্রমে এই বন্দিশালা থেকে বের হতে সক্ষম হয়েছেন কয়েকজন। আয়নাঘরের জীবন নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করা এই ব্যক্তিদের একজন মীর আহমেদ কাসেম আরমান।
গত আগস্টে আয়নাঘর থেকে ছাড়া পান তিনি। বন্দিদের মধ্যে তার মতো আইনজীবী ছাড়াও ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য, কূটনীতিক, এমনকি মানবাধিকারকর্মীরা।

আয়নাঘর থেকে মুক্ত বন্দিদের একজন কয়েকবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে জানতে পারেন যে তিনি মারা গেছেন ভেবে তার স্ত্রী আরেকজনকে বিয়ে করেছেন। মুক্তি পাওয়া আরেকজন জানতে পেরেছেন, তার খোঁজে বাবা কয়েক বছর মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে শেষমেশ মারা গেছেন।

আয়নাঘরে থেকে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা কত, তা এখনো অজানা। তবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বহু স্বজন আজও তাদের ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। তাদের দাবি, নিখোঁজ স্বজনদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক, আর না পাওয়া গেলে গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করা হোক। নিখোঁজ স্বজনের অপেক্ষায় থাকা এমন ব্যক্তিদের একজন তাসনিম শিপরা। তিনি বলেন, ‘কী ঘটেছে, আমরা সেই জবাব চাই।’ তাসনিম জানান, তাঁর চাচা বেলাল হোসেন ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন। সম্ভবত তিনি আর এ দুনিয়ায় নেই।’

সাবেক বন্দিদের তিনজনকে আয়নাঘরের একটা ছবি আঁকার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তাদের আঁকা ছবিতে (স্কেচ) দেখা যায়, একটা লম্বা করিডর। আধাডজন কক্ষ। একটি অপরটি থেকে দূরে, তবে মুখোমুখি। করিডরের দুই প্রান্তে শৌচাগার। একটি দাঁড়িয়ে ব্যবহারের, অন্যটি বসার। প্রতিটি কক্ষে ছিল একটি বড় এগজস্ট ফ্যান। এমন ফ্যান থাকার কারণ, যাতে নিরাপত্তারক্ষীদের আলাপ শোনা না যায় এবং বন্দিদের মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে তোলা যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমেদ কাসেম আরমান :

কারারক্ষীরা একদিন ভোর হওয়ার আগেই আহমেদ কাসেম আরমানের কক্ষে ঢোকেন, ওই সময় তার মনে হয়েছিল, এই মনে হয় সব শেষ। আরমানকে জানালাবিহীন একটি কারা প্রকোষ্ঠে আট বছর বন্দি রাখা হয়েছিল। ওই কক্ষে একেকটা দিনও ছিল যেন অন্তহীন অন্ধকার রাত। তবে ওই দিনটা ছিল ভিন্ন রকমের। ভোরের আলো ফোটার আগেই নিরাপত্তারক্ষীরা কক্ষে ঢুকে তাকে নামাজ শেষ করতে বলেন। খুলে দেন চোখের বাঁধন। খুলে ফেলেন হাতকড়াও।

আরমান ভেবেছিলেন, তাকে মেরে ফেলে হয়তো লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে, নয়তো ডোবায় ফেলা দেওয়া হবে। সেদিন তিনিসহ আরো কয়েকজনকে একটি ছোট ভ্যানগাড়িতে তুলে শুইয়ে বেঁধে দেন রক্ষীরা। দুজনের নিচে লুকিয়ে রাখা হয় তাঁকে। তাদের নিয়ে গাড়ি ছুটে চলে এক ঘণ্টা। কিন্তু দেশের অন্য অনেক রাজনৈতিক বন্দির মতো ভাগ্য বরণ করতে হয়নি মীর আহমেদ কাসেম আরমানকে। তিনি বলেন, ‘তাকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার এক প্রান্তে নির্জন মাঠে ফেলে চলে যান ওই নিরাপত্তারক্ষীরা।’

মীর আরমানকে ২০১৬ সালে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কিছু সদস্য। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল না। দৃশ্যত ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর ছেলে হওয়ায় তাকে আটকে রাখা হয়েছিল।

আরমান (৪০) বলেন, দীর্ঘ অন্ধকার বন্দিজীবনে একটি বিষয়ই তাকে পাগল হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। তা হলো তার স্ত্রী এবং বর্তমানে ১১ ও ১২ বছর বয়সের দুই কন্যার চিন্তা। তার কথায়, ‘আমি সব সময় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করেছি, এ পৃথিবীতে যদি আমাদের আর দেখা নাও হয়, বেহেশতে যেন একত্র হতে পারি।’

আইনজীবী আরমানকে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে তার স্ত্রী ও চার বছর বয়সী কন্যার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আপাতদৃষ্টে, এমন কাজের জন্য তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন না।

আরমানকে তাঁর বাবা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কিছুদিন আগে আটক করা হয়েছিল। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল হাসিনা সরকার। ১৯৭১ সালে মীর কাসেম আলী একটি ইসলামী দলের (জামায়াতে ইসলামী) কিশোর বয়সী ছাত্রনেতা ছিলেন। ব্যাংক, গণমাধ্যম ও হাসপাতালের মালিক মীর কাসেম আলীকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেছিলেন।

আরমান বলেন, ‘আমি বাবার একাত্তরের ভূমিকার জন্য গর্বিত নই।’ তবে এই আইনজীবী বলেন, তাঁর বাবা এক দিনের জন্যও কারাগারে থাকার উপযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন না; আর মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার যোগ্য তো ননই।

বছরের পর বছর যন্ত্রণা ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শেষমেশ আরমান তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা ও মায়ের সঙ্গে আবার একত্র হতে পেরেছেন। এর আগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে। তবে বাবাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়ে যাওয়া, নিঃসঙ্গ বন্দিজীবন কাটানো—জীবনকে বিধ্বস্ত করে দেওয়া এসব ঘটনা তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী :

সাবেক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা আযমীকেও দৃশ্যত তাঁর বাবার কারণে (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির গোলাম আযম) ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর তিনিও ওই সামরিক কারাগার (আয়নাঘর) থেকে ছাড়া পান।

আমান আজমি আট বছর বন্দি ছিলেন। আযমীর অনুমান, ওই কয়েক বছরে অন্তত ৪১ হাজারবার তাঁর চোখ বাঁধা এবং হাতকড়া পরানো হয়েছে।

আমান আযমী বলেন, ‘আমি (বন্দিজীবনে) সৃষ্টিকর্তার আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, ঘাস, গাছপালা দেখিনি। বন্দি হওয়ার পর প্রথম দিকে আমি দুটি ছোট ভেন্টিলেটর দিয়ে সূর্যের আলো দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর তারা (কর্তৃপক্ষ) সেগুলো বন্ধ করে দেয়।’

সাবেক সেনাকর্মকর্তা আযমী সাক্ষাৎকারে আয়নাঘরে চালানো নির্যাতন বলেন, বড় কাপড় দিয়ে কখনো কখনো তাঁর চোখ এমনভাবে বাঁধা হতো যে নাক আটকে গিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। ব্যথা হতো চোখেও। আবদ্ধ ঘরে থেকে থেকে ক্ষয়ে যায় তাঁর দাঁত, ত্বকে দেখা দেয় ঘা।

এত সব নির্যাতনের বাইরেও সারাক্ষণ একটা আতঙ্ক তাঁকে তাড়া করে বেড়াত বলে জানান আজমি। তিনি বলেন, ‘মনে হতো, একদিন রাতে তাঁকে বাইরে নিয়ে হত্যার পর কোথাও ফেলে দেওয়া হবে, আর পরদিন পত্রিকার পাতায় গল্প ছাপা হবে, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।’

আযমী বলেন, তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে মনেপ্রাণে চাইতেন, তাঁর মরদেহ যেন কুকুর-বিড়ালে খেয়ে না ফেলে। মরদেহ যেন তাঁর পরিবার ও স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে আযমী বলেছেন, ‘যে অপমান ও যন্ত্রণা আমি ভোগ করেছি, তা কোনো ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়।’

জীবনধারণের মতো পরিবেশ না থাকা কারাগারটিতে চলত কঠোর নজরদারি। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো নিয়মিত। চুল কাটা হতো প্রতি চার থেকে ছয় মাসে একবার। জিজ্ঞাসাবাদের প্রাথমিক দিনগুলোয় চলত শারীরিক নির্যাতন। বেশি হতো মানসিক নির্যাতন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান :

কাতার ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মারুফ জামান। ২০১৯ সালে তিনি আয়নাঘর থেকে ছাড়া পান। এর আগে এ বন্দিশালায় এক বছরের বেশি সময় (৪৬৭ দিন) ছিলেন তিনি।

আয়নাঘরের ছবি আঁকার অনুরোধে মারুফ জামান গুগল ম্যাপ খুলে দেখান। জুম করলে দেখা যায়, ঢাকার একটি সামরিক ঘাঁটি। সেখানেই আয়নাঘরের অবস্থান। এ গোপন বন্দিশালার নাম প্রথম জানা যায় ২০২২ সালে বিদেশে বাংলাদেশি গণমাধ্যম নেত্র নিউজের একটি প্রতিবেদন থেকে।

মারুফ জামান ও মুক্তি পাওয়া অন্য বন্দিরা বলেন, তাঁরা বন্দি অবস্থায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে থাকার বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। কেননা, ভোরবেলায় সেখানে কুচকাওয়াজের শব্দ শুনতেন তাঁরা। জানতেন, ধারেকাছেই কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবন আছে আর সেখানকার জীবনযাত্রাও স্বাভাবিক। সেখান থেকে প্রতি শুক্রবার ভেসে আসত বাচ্চাদের গানের সুর।

শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে তাঁর ভারতীয় স্বার্থরক্ষার বিষয়ে সমালোচনা করতেন মারুফ জামান। আয়নাঘরে জিজ্ঞাসাবাদকালে তাঁর মুখে অনবরত ঘুষি মারা হতো বলে জানান তিনি। এতে তাঁর দুটি দাঁত পড়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তাঁর সামনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে নিজের দেওয়া সব পোস্ট প্রিন্ট করে আনতেন। পোস্টগুলোর নির্দিষ্ট কিছু প্যারা সম্পর্কে জেরা করতেন। জিজ্ঞাসাবাদকারীদের একজন জামানকে একদিন জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার পোস্ট প্রিন্ট করতে আমরা অনেক অর্থ খরচ করেছি। আপনার বাবা কি এসব অর্থ আমাদের ফেরত দেবেন?’

মাইকেল চাকমা :

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকারকর্মী মাইকেল চাকমা। আগস্টের কোনো এক দিন কয়েক ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে তাঁকে চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি জঙ্গলে ছেড়ে যাওয়া হয়। মাইকেল চাকমা বলেন, ‘পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথম আমি দিনের আলো দেখলাম। যখন দেখছিলাম, দুইবার পরীক্ষা করছিলাম, আমি কি এ আলো স্বপ্নে দেখছি, নাকি বাস্তবেই।’

ঢাকায় ২০১৯ সালে একটি ব্যাংকে ঢোকার পর অপহৃত হন মাইকেল চাকমা। কারাগারের ভেতর তিনি জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কাছে জানতে চাইতেন, কেন সেখানে তাঁকে রাখা হয়েছে। সবচেয়ে কাছাকাছি যে জবাব পেয়েছেন তা হলো, রাজনৈতিক প্রতিশোধ।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজের দল আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে অংশ নিতে একবার চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। সে সময় মাইকেল চাকমার দলীয় ছাত্রসংগঠন সড়ক অবরোধ করেছিল। সেদিন প্রধানমন্ত্রী হুমকি দিয়ে সমাবেশে তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন। বলেছিলেন, এ বিক্ষোভের পেছনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের তিনি দেখে নেবেন।

মাইকেল চাকমা বলেন, ওই ঘটনা তাঁকে (শেখ হাসিনা) ক্ষুব্ধ করেছিল। তিনি আরো বলেন, ‘আমি সব সময় তাঁদের কাছে জানতে চাইতাম, আমার কী অপরাধ? আমি কী করেছি? আমি কি দোষী? তাঁরা বলতেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে নিয়ে আমি অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনীতি করছি।’

ন্যায়বিচারের সন্ধানে :

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর নারী-পুরুষের ছোট একটি দল রাস্তায় লাখো উল্লসিত জনতার ঢেউ ঠেলে হাজির হয়েছিল সেনা সদর দপ্তরের ফটকে। ওই দলে এমন কিছু ব্যক্তি ছিলেন, যাঁরা হাসিনার আমলে জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েও বেঁচে যান। তাঁদের একজন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান। দেড় বছর নিখোঁজ ছিলেন তিনি। এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা আয়নাঘর প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা দিন-রাত ঘুমাতে পারতাম না। লোকজন কাঁদত, চিৎকার করত, তাঁদের নির্যাতন করা হতো।’

ফটকে হাজির হওয়া নারীরা খুঁজছিলেন তাঁদের হারানো স্বজনদের। তাঁরা অনেক বছর ধরেই দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, স্বজনের সন্ধানে। জীবিত না পেলেও তাঁরা চান, স্বজনের মরদেহের সন্ধানটুকু পেতে।

এ ঘটনার পর কয়েক দিনে ফিরে এসেছেন আরমান, আজমি ও মাইকেল চাকমা। তাঁদের এ মুক্তি গুমের শিকার অন্য ব্যক্তিদের মা, বোন, স্ত্রী-কন্যাদের মনে আশা জুগিয়েছে।

ঢাকা সেনা সদর দপ্তরের মতোই দেশের অন্যান্য অংশে বিভিন্ন সেনাঘাঁটির বাইরে হারানো স্বজনদের খোঁজে ভিড় করেছিলেন অনেকে। তাঁদের সবার প্রশ্ন, ‘আমাদের প্রিয় মানুষ কোথায়?’ স্বজন হারানো এসব ব্যক্তি যেখানেই সমবেত হোন না কেন, তাঁদের দাবি, ‘বন্ধ করা হোক এসব আয়নাঘর’।