২০২৩ সালে ডেঙ্গু শনাক্তের জন্য বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান একটি ডেঙ্গু কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন, যা দেশের জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। তবে, পরবর্তীতে এই কিট নিয়ে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিটটি শতভাগ কার্যকর নয় এবং কোনো দেশীয় উদ্ভাবনও নয়। বরং চীন থেকে কাঁচামাল এনে তা দেশীয় উপকরণের সঙ্গে সংযোজন করা হয়েছে। বিআরআইসিএমের একাধিক ল্যাবে পরীক্ষা করার পরেও কিটটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি।
তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে মালা খানকে ১৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিআরআইসিএমের কিছু কর্মকর্তা জানান, ডেঙ্গু কিট উদ্ভাবনের নাটক সাজিয়ে প্রকল্পটি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিটটি ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্তে শতভাগ কার্যকর নয়। দেশীয়ভাবে উদ্ভাবনও করা হয়নি। চীন থেকে কাঁচামাল এনে বাজার থেকে দেশীয় উপকরণ কিনে সংযোজন হয়েছে। এখানে নতুন উদ্ভাবনের কিছু নেই। এমনকি কিটের সক্ষমতা যাচাইয়ে সে সময় যে তিন ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়, তাদের মূল্যায়নেও ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্তে এর কার্যকারিতা মেলেনি। ব্যক্তিগত সখ্যের কারণে তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ১৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি মালা খানকে দেন। এমনকি তাঁর সহযোগিতায় কিটটি চলতি বছর ‘শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী উদ্যোগ’ নির্বাচিত হয়।
কিট উদ্ভাবনে জড়িত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরআইসিএমের এক কর্মকর্তা জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের সহযোগিতায় ১৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প পেতে ডেঙ্গু কিট উদ্ভাবনের নাটক সাজানো হয়। মালা খান কিট উদ্ভাবন নিয়ে যেসব তথ্য গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন, সবই ভিত্তিহীন।
বিআরআইসিএমের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দেশে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, হেপাটাইটিস-বি, ম্যালেরিয়া, কভিডসহ বিভিন্ন রোগ শনাক্তের কিট আমদানি করতে হয়। এ প্রবণতা কমাতে দেশীয়ভাবে কিট উৎপাদনে ১৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় সরকার। ইয়াফেস ওসমানের সঙ্গে বিশেষ সখ্য থাকায় মালা খানের নেতৃত্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হয়। এর পর প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় এবং গত বছরের ১৩ নভেম্বর প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর পরিকল্পনা কমিশনে মূল্যায়ন কমিটির সভাও হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হওয়ায় সব ভেস্তে গেছে।
কিটটি পরীক্ষার পর তিনটি ল্যাব থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টগুলোতে এর কার্যকারিতা শূন্য বলে প্রমাণিত হয়। অথচ তখনকার সরকার কিটটি ‘শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী উদ্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।