১৬ বছর দেশের মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগ যে আচরণ করেছে তার জন্য দলটিকে বিচারের মুখোমুখি হতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আত্মস্বীকৃত ফ্যাসিস্ট। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। ১৬ বছর তারা মানুষের অধিকারই শুধু হরণ করেনি, তারা দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছিল।
’
গত রবিবার লন্ডনের রয়েল রিজেন্সিতে কোয়ালিশন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস ইন বাংলাদেশ আয়োজিত এক ‘সিভিক রিসিপশন’ (নাগরিক সংবর্ধনা) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) চোখের সামনে মানুষ হত্যা করেছে। আমরা চাই, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের বিচার হোক। আমি নিজেও অন্যায় বিচারের ভিকটিম।
আমাকে গ্রেপ্তার করে বলা হয়েছে, আমি নাকি বিছানার নিচে ককটেল নিয়ে ঘুমিয়েছি!’
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের খুনের রাজনীতি শুরু করেছিল। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার হীন প্রচেষ্টা চালায় এবং একই সঙ্গে বিডিআর বাহিনীকেও শেষ করে দেয়। এই দুই খুনের মিশনের পর তারা আঘাত করে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। অনেকেই ভেবেছিলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি জামায়াতের ওপর দিয়ে যায় তবে দেশ বুঝি শান্ত হয়ে যাবে।
কিন্তু তা হয়নি।
ডা. শফিক যুক্তরাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দ্বারা নির্যাতিতদের আশ্রয় এবং নাগরিকত্ব দেওয়ায় আমি যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আশা প্রকাশ করছি, আপনারা কোনো দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেবেন না।’
তিনি প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমাকে সংবর্ধনা দিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আপনারা প্রবাসে থেকে ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ করেছেন। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। এ জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক স্বীয় মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করবে। যেখানে আমাদের নারীরা মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস করবে। আমাদের বিশাল ম্যান পাওয়ারকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
জামায়াতের নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে শহীদ করা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক আমিরে জামায়াত প্রফেসর গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ভয়াবহ স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, ‘ছাত্ররা তাদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, পরে জনতা তাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে। শহীদ আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়ে বলেছিলেন, হয় অধিকার দাও, না হয় গুলি করো। আহত ও পঙ্গু হয়েছে হাজারো ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতার এমন ত্যাগের বিনিময়েই দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের আহতদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি আহত ও নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসিত করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও কমিউনিটির পরিচিত মুখ মুফতি সদরুদ্দিন, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও উলামা মাশায়েখ ইউকের সভাপতি শায়েখ মওদুদ হাসান, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা প্রমুখ।