প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি ভারতে থাকা অবস্থায়ই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাই নয়, সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো তিনি সেখান থেকে কথা বলছেন। যা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ বিষয়টি আমাদের সমাধান করতে হবে।‘
হত্যা ও নির্যাতনে জড়িতদের বিচার ও জবাবদিহিতার পর আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে বলে টাইম ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আরো বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) অন্য যে কারও মতো স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারে। আমরা তাদের রাজনৈতিক ময়দানে মোকাবিলা করব।‘
সাক্ষাৎকারে ৮৪ বছর বয়সী এই নোবেলজয়ী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংস্কার প্রক্রিয়া চালানোর জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান সংস্কারের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী সরকার সম্পূর্ণ দমনপীড়ন, সব অভিযোগ অস্বীকার, হত্যা-গুম, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার পরিবেশ তৈরি করেছিল। এটি ছিল একটি ফ্যাসিস্ট শাসন।‘
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি ভারতে থাকা অবস্থায়ই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাই নয়, সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো তিনি সেখান থেকে কথা বলছেন। যা আমাদের জন্য অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এ বিষয়টি আমাদের সমাধান করতে হবে।‘
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার পেছনে মার্কিন সমর্থনকে বড় অনুঘটক হিসেবে দেখা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাতে সেটা প্রমাণিত হয়েছিল। এছাড়া, এমআইএফ এবং বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বজায় রাখাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মার্কিন সমর্থনের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার অপসারণের পর হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর কয়েকটি হামলার ঘটনাকে উগ্রপন্থী র্যাডিক্যাল ইসলামী দলগুলোর ক্ষমতা দখলের প্রমাণ হিসেবে প্রচার করেছিল আওয়ামী লীগ।
গত ৩১ অক্টোবর ডোনাল্ডে ট্রাম্প সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ পোস্ট করেন যে, বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দেশের সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থায় তাদের আক্রান্ত ও লুট করা হয়েছে। এসব ঘটনার নিন্দা জানান ট্রাম্প।
আওয়ামী লীগ এবং প্রভাবশালী ভারতীয়-আমেরিকানরা ট্রাম্পকে বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চাপ দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এর গুরুত্বও বিশেষ। ড. ইউনূসের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব পরিস্থিতি আরো জটিল করেছে। হিলারি ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ড. ইউনূস ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হিলারির পরাজয়ে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পের জয় আমাদের এতটাই আঘাত করেছে যে, আজ সকালে আমি ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলাম না। আমার সমস্ত শক্তি হারিয়ে গিয়েছিল।‘
তবে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র খুঁজে পাবেন বলে আত্মবিশ্বাসী ড. ইউনূস। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। আর আমরা এখন ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আমরা কোনো সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বিনামূল্যে অর্থ চাই না। আমরা একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই।‘
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশে পাচার করা কয়েক বিলিয়ন ডলার পুনরুদ্ধার করবেন বলেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ প্রধান উপদেষ্টা। ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লেয়েন এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক বলেও জানিয়েছেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, আমরা যে দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছি তারা সবাই টাকা ফেরত আনার জন্য সমর্থন প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
এদিকে, মানবাধিকার কর্মীরা বিশ্বাস করেন যে, অন্তর্বর্তী প্রশাসনে ইসলামী দলগুলোর অন্তর্ভুক্তি সংখ্যালঘুদের স্থানকে আরো সীমিত করবে। এছাড়া, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নারীরা সামনের সারিতে থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়টি সংস্কার কমিশন সম্পূর্ণ পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার ঘটনায় হতাশা ও উদ্বেগ ছড়িয়েছে অনেকের মাঝে।
দেশে বিশৃঙ্খলা ও স্থবিরতা অব্যাহত থাকলে জনগণ শেখ হাসিনার শাসনামলকে ধীরে ধীরে ইতিবাচকভাবে দেখতে শুরু করতে পারে। গত দশকে বাংলাদেশ ছিল এশিয়া-প্যাসিফিকের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি, যেখানে জিডিপি ২০০৬ সালের ৭১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
ড. ইউনূস জানেন যে, রাষ্ট্র সংস্কারের কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করাই একমাত্র স্বৈরাচারের ফিরে আসাকে রুখে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘সংস্কার হলো বিপ্লবের মূল কথা। এ কারণেই আমরা এটিকে (গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশ) বাংলাদেশ ২.০ বলি।‘