প্রতিবছর ডিসেম্বরে বর্ষসেরা হিসেবে একটি দেশের নাম ঘোষণা করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্ট। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, এবারের কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার বা বর্ষসেরা দেশ হিসেবে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছে সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড।
দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সুখ বা নৈতিক উৎকর্ষতার ভিত্তিতে এই মূল্যায়ন করা হয় না। মূল্যায়নে বিবেচনা করা হয় বিগত বছরে উন্নতির মাত্রার জন্য।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে দেখেছে ইকোনমিস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এ বছর আমাদের বিজয়ী হচ্ছে বাংলাদেশ। তারা এক স্বৈরশাসককে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।’
দ্য ইকোনমিস্ট লিখেছে, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলেও ধীরে ধীরে দমনমূলক হয়ে ওঠেন। তার আমলে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো ও বিক্ষোভকারীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশে ক্ষমতা পরিবর্তনের সময় সহিংসতার পুরোনো ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও দুর্নীতিগ্রস্ত। এছাড়া, ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের উত্থানের হুমকি রয়েছে। এত কিছুর পরও পরিবর্তন নিয়ে আশা প্রকাশ করেছে ইকোনমিস্ট।
ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের সমর্থনে নোবেলজয়ী ড. ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সরকার দেশে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও অর্থনীতি স্থিতিশীল করেছে।
বাংলাদেশের সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলোও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন ও ২০২৫ সালে জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি। বিষয়টি সহজ হবে না বলে স্বীকার করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একজন স্বৈরশাসককে অপসারণ ও উদারপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ আমাদের তালিকায় বর্ষসেরার স্থান পেয়েছে।’
বাংলাদেশের পর সংক্ষিপ্ত তালিকায় আছে সিরিয়া, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড। বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তারা দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সিরিয়া। অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছে আর্জেন্টিনা । এদিকে, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন প্রশাসন গঠন করায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ডের নাম।
দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সংকট কাটিয়ে ও একটি মধ্যপন্থি সরকার পুনর্নির্বাচিত করার জন্য গত বছর গ্রিস এই তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিল।
এছাড়া বিভিন্ন সময় এই খেতাব পাওয়া দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানো দেশ কলম্বিয়া,অনভিপ্রেত আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ইউক্রেন ও গণতন্ত্রায়ণের জন্য মালাউই।