ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সৈকতে ভেসে আসা তিমির সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল, তখন প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, এসব হচ্ছে মূলত উপকূলে সৃষ্ট উইন্ডমিল হাওয়াকলগুলোর কারণে। তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবে ওগুলোই এসব তিমিকে উন্মত্ত করে তীরের দিকে পাঠাচ্ছে।
এরই মধ্যে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, মেক্সিকো উপসাগরের নাম পাল্টে তিনি ‘আমেরিকা উপসাগর’ করতে চান। সেই সঙ্গে কথিত জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ৫১ মাইল দীর্ঘ পানামা খাল দখলে সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথাও তিনি উড়িয়ে দেননি। দখল নিতে চান ৮ লাখ ৩৬ হাজার বর্গমাইল ব্যাপ্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডেরও।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্যের কারণে তাঁর পরিবারের সদস্য ও সমর্থকরা বলতে পারেন– ‘আমরা ফিরে এসেছি’। আসলেই তারা ফিরে এসেছেন। গত মঙ্গলবার ফ্লোরিডার পাম বিচে মার-এ-লাগোতে নিজের শয়নকক্ষে এক ঘণ্টা ধরে ট্রাম্প নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, যেখানে জো বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত নানা অসন্তোষও উগরে দেন। কার্যত ট্রাম্পের এসব আচরণের সঙ্গে ফিরছে একটি ভিন্ন বিষয়ও– প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকাকালের বিশৃঙ্খলা।
ট্রাম্প এখন নিত্যদিনের ভাবনায় আবার ফিরে এসেছেন। কেউ কেউ বলতে পারেন– তিনি তো ভাবনা থেকে যানইনি। মূলত আগামী চার বছর কেমন যাবে, গত মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় তিনি একটি অভিযোগ করতেন– গোসলের সময় পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ থাকে না। এবার তিনি বললেন, লোকজন চায় দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করতে; বাসনকোসন ধুতে। তারা আরও বেশি পানির ব্যবহার করতে চায়। অতঃপর তিনি ডেনমার্কের সঙ্গে সামরিক সংঘাতে জড়ানোর শঙ্কা নিয়ে মুখ খোলেন। গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে সম্মত না হলে তিনি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশ ডেনমার্কের সঙ্গে জোর প্রয়োগের আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দেননি। ট্রাম্পের দাবি, গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্ক দ্বিচারিতা করছে।
বিবিসি জানায়, মার-এ-লাগোতে ওই সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ডেনিস অঞ্চল (গ্রিনল্যান্ড) ও পানামা খাল দখলে তিনি কি সামরিক ও অর্থনৈতিক বল প্রয়োগের দিকে যেতে পারেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনাকে আমি এ দুটি বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তবে এটুকু বলতে পারছি, আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য এ দুটি স্থান প্রয়োজন।’ এরই মধ্যে ডেনমার্ক ও পানামা তাদের এলাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে কানাডা প্রসঙ্গেও প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয়– তিনি কানাডা দখল করে নেবেন কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি অর্থনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করবেন।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে সীমান্ত রয়েছে, সেটি বিশ্বের দীর্ঘতম। সপ্তদশ শতকে চুক্তির মাধ্যমে এ সীমান্ত গড়ে তোলা হয়। প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ট্রাম্প বলেন, কানাডাকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্র শত শত কোটি ডলার খরচ করছে। ট্রাম্প কানাডার গাড়ি, কাঠ দুগ্ধজাত পণ্য ক্রয়েরও কড়া সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের উচিত হবে অঙ্গরাজ্যে পরিণত হওয়া।’
এরই মধ্যে ট্রাম্পের এ মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, নরকে তুষারগোলকের মতো দুই দেশ এক হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনাও নেই। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র যে কানাডার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে পারে, সে শঙ্কাও তিনি উড়িয়ে দেন। ট্রুডো বলেন, দুই দেশের কর্মী ও সম্প্রদায়ের কারণে উভয় পক্ষ উপকৃত হচ্ছে। দুই দেশ একে অপরের ব্যবসা ও নিরাপত্তার অংশীদার।