লাখো মানুষের ভালোবাসায় রাজকীয় বিদেশযাত্রা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিরাপদে লন্ডন নিয়ে যেতে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠান কাতারের আমির। শুভ কামনা জানান সেনাপ্রধান থেকে সরকারের উপদেষ্টারা। পথে পথে তাকে শুভ কামনা জানাতে ভিড় করেন দলের নেতাকর্মী ও হাজারো সাধারণ মানুষ। তাদের মধ্যে গভীর আবেগ খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনার।
এদিকে নেট দুনিয়ায়ও তিনবারের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে চলছে উচ্ছ্বাসের চর্চা। তারা বলছেন, আল্লাহ যাকে সম্মান দিতে চান, কার সাধ্য তা কেড়ে নেয়। এই অমোঘ বাণীরই বাস্তব প্রতিফলন খালেদা জিয়ার সমহিমায় রাজকীয় বিদেশযাত্রা। এর আগে হাসিনামুক্ত দেশে দীর্ঘ এক দশক পর সেনানিবাসে গিয়েছিলেন সেনাপ্রধানের আমন্ত্রণে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও দলমত নির্বিশেষে সবার শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
অথচ ফরমায়েসি মামলায় সাজা দিয়ে কী নির্যাতনটাই তার ওপর চালান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অকথ্য ভাষায় করেন গালিগালাজ, পদ্মা সেতুর ওপর থেকে ফেলে দিতে চেয়েছেন নদীতে। শত বছরের পুরনো অন্ধকার কারাগারে মাসের পর মাস রাখা হয় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। বঞ্চিত করা হয় চিকিৎসা থেকে। নানা শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে দেশ-বিদেশের সাধারণ থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিক থেকে রাষ্ট্রপ্রধান- কারও অনুরোধেই মন গলেনি ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনার। তিনি চেয়েছিলেন তার এই প্রধান প্রতিপক্ষকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে স্বরাজ করবেন দেশে।
নিপীড়ন-নির্যাতন আর চিকিৎসাহীনতার কষ্ট সইয়ে যাওয়া খালেদা জিয়া বরাবর সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রাখেন। তার অবিরাম আস্থা ছিল জনগণের ভালোবাসার প্রতি। আর ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা ও দেশপ্রেম। দেশে ফিরলে তাকে জেলে পুরবেন শেখ হাসিনা, সেটা জেনেও তাই বিদেশে থেকে যেতে চাননি বিএনপির চেয়ারপারসন। এমনকি শুধু তার জন্য আন্দোলন-ভাঙচুর হোক, তাও চাননি তিনি, বরং দলের মহাসচিবের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। মুক্তিযুদ্ধের বীর-উত্তম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর প্রতি শেখ হাসিনার অন্যায় আচরণ ভালোভাবে নেয়নি দেশের মানুষ। যদিও স্বৈরাচারী সরকারের দমন-পীড়নের ভয়ে মানুষ মুখ খুলতে পারেনি তখন, কিন্তু গণমানুষের শক্তির কাছে স্বৈরাচারীর বাঁধ বেশি দিন টিকতে পারে না, এটা দেখা গেছে যুগে যুগে দেশে দেশে।
শেখ হাসিনাও পারেননি। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মুছে দিতে তার সব অপচেষ্টা একদিন ব্যর্থ হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। দেশ ছেড়ে পালান কিংবা আত্মগোপন করেন তার মন্ত্রী-এমপি আর দলীয় নেতাকর্মীরা।
৫ আগস্ট থেকে ৭ জানুয়ারি। পাঁচ মাসের ব্যবধান। কী পার্থক্য দেশের প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতার বিদেশযাত্রায়। একজন শেখ হাসিনা জনতার রোষ থেকে বাঁচতে কার্গো বিমানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে। আর একজন খালেদা জিয়া লাখো জনতার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর সম্মানের শুভকামনা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যান যুক্তরাজ্যে।
নিয়তির কী নির্মম পরিহাস। গত বছরের এই ৭ জানুয়ারি ডামি ভোটের নির্লজ্জ উৎসবে মেতে ছিলেন শেখ হাসিনা। আর নিজ ঘরে বন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। আজ ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুগ্রহে আশ্রিত শেখ হাসিনা কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। বেগম খালেদা জিয়া কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজকীয় সংবর্ধনা নিয়ে উড়াল দেন লন্ডনে।