নেত্রকোণায় পুলিশের এসআইকে কুপিয়ে হত্যা

Spread the love

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি কোপে মো. শফিকুল ইসলাম (৪৮) নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে শফিকুল ইসলামের ওপর হামলা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে স্থানীয় পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত শফিকুলের স্ত্রী স্কুলশিক্ষক রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘কেন এমন হলো, কারা আমার স্বামীকে হত্যা করল আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

শফিকুলের ছেলে রাফিউল ইসলাম (১৪) বলেন, ‘শুক্রবার তাদের সবাইকে ময়মনসিংহে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বাবার। সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র কিনতে যান। পথে দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।’ বাবাকে হত্যার বিচার চেয়েছেন ছেলে রাফিউল।

এর আগে, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দুর্গাপুর পৌর শহরের পানমহাল রোড এলাকায় দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শফিকুল ইসলামের মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর গ্রামের বাড়িতে আনা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।

নিহত শফিকুল জেলার দুর্গাপুরের চণ্ডীগড় ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি জামালপুর পুলিশ লাইনসের বেতার বিভাগে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম ছুটি নিয়ে বুধবার গ্রামের বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি দুর্গাপুর পৌর শহরের বাগিচাপাড়া এলাকার বাসা থেকে বাজারের উদ্দেশে বের হন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে পানমহাল রোড এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তিন-চারজন দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।
ধাঁরালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে তার বাঁ-পা গোড়ালি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি হাত, বুক, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়।

এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারহানা আক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে ভর্তির কিছুক্ষণ পর রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

ঘটনাস্থল পানমহাল রোড এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিৎকার শুনে এগিয়ে এসে দেখেন, কয়েকজন দুর্বৃত্ত একজনকে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। লোকজনের আগমন টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা দৌড়ে সটকে পড়ে। পুলিশকে খবর দেওয়া হলে অনেক পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। কয়েকজন মিলে আহত পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, ওই রাস্তায় সড়কবাতি না থাকায় অন্ধকারে কাউকে চেনা যায়নি। ওই সময় রাস্তায় পথচারীও ছিল না। অনেকটা নীরব ছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাচ্চু মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

তবে জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহসহ বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।