পশ্চিম তীরের একটি সংকটপূর্ণ অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রাণঘাতী অভিযান চলায় বৃহস্পতিবার শত শত মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে শুরু করেছে। একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জেনিন অঞ্চলে একটি অভিযান শুরু করে, যা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরুর কয়েক দিনের মধ্যেই এ অভিযান শুরু হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আয়রন ওয়াল’ নামের এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো ‘সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করা’।
নেতানিয়াহু এই অভিযানের সঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর কৌশলের সংযোগের কথা উল্লেখ করেছেন, যা ‘গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও পশ্চিম তীরে ইরানের অস্ত্র সরবরাহ’ প্রতিরোধের জন্য পরিচালিত হচ্ছে। ইসরায়েলি সরকার ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করে, বিশেষ করে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অস্ত্র ও তহবিল সরবরাহ করছে।
জেনিনের গভর্নর কামাল আবু আল-রুব জানিয়েছেন, ‘শিবিরের শত শত বাসিন্দা ঘর ছাড়তে শুরু করেছে।
কারণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ড্রোন ও সামরিক যান থেকে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে তাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।’ তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘জেনিনে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কোনো নির্দেশ সম্পর্কে তারা জানে না।’
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছে। জেনিনের বাসিন্দা সালিম সাদি জানান, ‘শিবিরের অনেক বাসিন্দা সরে যেতে শুরু করেছে।
আমার বাড়ির সামনে সেনাবাহিনী রয়েছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে আমার ঘরে প্রবেশ করতে পারে।’
এ ছাড়া এএফপির এক ফটোগ্রাফার দেখেছেন, আটককৃত বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় সাদা পোশাক পরিয়ে পশ্চিম তীর থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা মূলত বুধবার থেকেই জেনিন এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে পালাতে শুরু করেছে। এএফপিটিভির ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একদল পুরুষ, নারী ও শিশু কর্দমাক্ত রাস্তায় হাঁটছে এবং তাদের ওপর ড্রোনের স্পষ্ট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এদিকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা ক্রমেই বেড়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনা বা বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় অন্তত ৮৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে ফিলিস্তিনি হামলা বা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে অন্তত ২৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে সেনারাও রয়েছে।
জেনিনে এই অভিযান শুরু হয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক দিন পর। এই যুদ্ধবিরতির আগে ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের ফলে গাজায় ৪৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক।
যুদ্ধবিরতির অধীনে একটি চুক্তির মাধ্যমে গাজা থেকে তিন ইসরায়েলি নারী জিম্মিকে মুক্ত করা হয়। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে প্রায় ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো মেনে চলছে এবং সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী রবিবার দ্বিতীয়বারের মতো উভয় পক্ষের জিম্মি-বন্দি বিনিময় করার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের প্রতি ‘অটল সমর্থন’ জানিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকারের সমর্থন তার শীর্ষ অগ্রাধিকার।
সূত্র : এএফপি