ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টা হামলায় জবাব দিচ্ছে পাকিস্তান। দুদেশের যুদ্ধ এখনও চলছে। দুপক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তান দাবি করছে, তাদের ২৬ জন নাগরিক নিহত হয়েছে। ভারতের দাবি, হামলায় তাদের অন্তত ১০ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এমন যুদ্ধাবস্থায় আগ্রহের কেন্দ্রে এসেছে দুদেশের কার কেমন সামরিক সক্ষমতা।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সামরিক সক্ষমতায় পাকিস্তানের অবস্থান কিছুটা পেছনে। ১৪৫টি দেশের মধ্যে ১২তম অবস্থানে তারা। বিশ্বে সামরিক শক্তি এবং অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে ধারণা তুলে ধরা গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের পরে ভারত বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী সামরিক শক্তি।
সৈন্য সংখ্যা বেশি কার
সুইডিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের তুলনায় প্রতিরক্ষা খাতে নয় গুণ বেশি ব্যয় করেছে ভারত। ২০২৫ সালে, ভারত তার প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে, যেখানে পাকিস্তান ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি বরাদ্দ দিয়েছে।
সেনাসংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে ভারত। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের মতে, ভারতের মোট সক্রিয় সৈন্য সাড়ে ১৪ লাখের কিছু বেশি, অন্যদিকে পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের কিছু বেশি। রিজার্ভ সেনা বা প্যারামিলিটারি বাহিনীর ক্ষেত্রেও এগিয়ে ভারত।
স্থলভাগের শক্তিতে কে এগিয়ে
স্থলভাগের শক্তি বিবেচনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ও মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর বা রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি সংখ্যা ৬৬২, ভারতের ১০০। পাকিস্তানের মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর ৬০০, ভারতের ২৬৪।
অন্য বেশ কিছু দিকে সংখ্যায় এগিয়ে ভারত। ভারতের ট্যাংক সংখ্যা ৪ হাজার২০১টি, সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি, টোওড আর্টিলারি বা টেনে নেয়ার কামান ৩ হাজার ৯৭৫টি। পাকিস্তানের ট্যাংক রয়েছে ২ হাজার ৬২৭ টি, সাঁজোয়া যান ১৭ হাজার ৫১৬টি, টোওড আর্টিলারি ২ হাজার ৬২৯ টি।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনীর মোট ২৯৩টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে রয়েছে দুটি বিমানবাহী রণতরী, ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট, ১৮টি সাবমেরিন, ১৮টি কর্ভেট ও ১৩৫টি টহল জাহাজ।
পাকিস্তানি নৌবাহিনীর মোট ১২১টি যুদ্ধজাহাজের মধ্যে বিমানবাহী রণতরী ও ডেস্ট্রয়ার নেই। তাদের রয়েছে নয়টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন, নয়টি কর্ভেট, এবং ৬৯টি টহল জাহাজ।
আকাশ পথের শক্তি
ভারতের বিমানবাহিনীর অধীনে রয়েছে ৩১টি স্কোয়াড্রন, যেখানে প্রতিটি স্কোয়াড্রনে ১৭ থেকে ১৮টি যুদ্ধবিমান থাকে। অপরদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর রয়েছে ১১টি স্কোয়াড্রন।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কাছে মোট ২ হাজার ২২৯টি বিমান রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের আছে ১ হাজার ৩৯৯টি। পাকিস্তানের কাছে আছে ৪১৮টি যুদ্ধবিমান- যার মধ্যে ৯০টি বোমারু বিমান। বিপরীতে ভারতের রয়েছে ৬৪৩টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ১৩০টি বোমারু বিমান।
পারমাণবিক অস্ত্র
পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে সুইডিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২৪ সালের প্রতিবেদন বলছে পারমাণবিক ওয়ারহেডের দিক থেকে দুটি দেশ প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে।
সে প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে আনুমানিক ১৭২টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, আর পাকিস্তানে আছে আনুমানিক ১৭০টি। তবে, দুই দেশের কয়টি ওয়ারহেড ঠিক অপারেশনাল বা প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে, তা ঠিক স্পষ্টভাবে জানা যায় না।
এসআইপিআরআই-এর এর মতে, পাকিস্তান মূলত ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, আর ভারত মনোযোগ দিচ্ছে দূরপাল্লার অস্ত্রের দিকে। অর্থাৎ এমন অস্ত্র যা চীনকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।
চীন, যা ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিবেশী এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তি, ২০২৪ সালে তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বা ওয়ারহেডের সংখ্যা ২২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এখন তাদের মোট ওয়ারহেড সংখ্যা ৪১০ থেকে বেড়ে ৫০০ হয়েছে।