রাসুলুল্লাহ (স.) এর কথা, কাজের বিবরণ কিংবা কথা ও কাজের সমর্থন এবং অনুমোদন বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত, ইসলামি পরিভাষায় হাদীস নামে অভিহিত। হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ।
সুন্নাহ বা সুন্নত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নবী করীম (স) অবলম্বন করতেন তাকে সুন্নাহ বলা হয়। অন্যকথায় বলা যায়, রাসুলুল্লাহ (স) কর্তৃক প্রচারিত উচ্চতম আদর্শই সুন্নত।
কোরআন মজিদে মহত্তম ও সুন্দরতম আদর্শ বলতে এই সুন্নতকেই বোঝানো হয়েছে। ইসলামি পরিভাষায় সুন্নত হলো রাসুলুল্লাহ (স) এর পন্থা ও আদর্শ। এছাড়াও সাহাবায়ে কেরামদের আকিদা ও আমল সুন্নাহর অন্তর্গত।
প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ ছয়টি। ১. সহীহ বোখারী ২. সহীহ মুসলিম ৩. সুুনানে তিরমিজী ৪. সুনানে আবু দাউদ, ৫. সুনানে নাসাঈ ৬. সুনানে ইবনে মাজাহ্। এছাড়াও আরো কয়েকটি হাদীস শরীফ রয়েছে প্রাসঙ্গিকভাবে যা উল্লেখ করা হয়।
সুন্নাহ বা সুন্নত আরবি শব্দ; যার আভিধানিক অর্থ হলো ঐতিহ্য বা উপায়। মুসলিমদের কাছে সুন্নাহ নবী করীম (স) কর্তৃক নির্দেশিত জীবনব্যবস্থা। মুসলমানগণ বিশ্বাস করে থাকেন যে, নবী করীম (স) এর জীবন হলো সর্বোত্তম আদর্শ; যা তাদের জীবনে পালনীয়।
কোরআনুল কারীম ইসলামি জীবনব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদীস শরীফ সেখানে মৌলনীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়। কোরআনুল কারীম ইসলামের আলোকস্তম্ভ, হাদীস শরীফ তার বিচ্ছুরিত আলো।
হাদীস শরীফ কোরআনুল কারীমের নির্ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে; তেমনিভাবে কোরআনুল কারীমের ধারক ও বাহক রাসুলুল্লাহ (স) এর পবিত্র জীবনচরিত, কর্মনীতি, আদর্শ ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এজন্যেই ইসলামি জীবনবিধানে কোরআনুল কারীমের পরপরই হাদীসের স্থান।
কোরআনুল কারীমের শিক্ষা ও নির্দেশসমূহ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কার্যকর করার জন্যে রাসুলুল্লাহ (স) যে পন্থা অবলম্বন করেছেন তাহাই হাদীস।
নবী কারীম (স) এর আনুগত্য করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কোরআনুল কারীমে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং রাসুল তোমাদেরকে যা নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাকো’। (সুরা হাশর-৭)
কোরআনের পরেই মুসলমানের জীবনে হাদীস হচ্ছে পথের আলোকোজ্জ্বল দিশা। শতাব্দীর পর শতাব্দী হাদীসের বাণী সত্যানুসন্ধানীদের অনুপ্রাণিত করে এসেছে। তাদেরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে সহজ ভাষায় হাদীসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণীর মর্মান্তর সর্বস্তরের কাছে পৌঁছে দেয়ার চমৎকার এক সংগ্রহ ‘হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী’ গ্রন্থ।
গ্রন্থকারের মতে, ‘হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী পবিত্র বাণীর শাব্দিক অনুবাদ নয়, মর্মান্তর। সহজ সাবলীল এই মর্মান্তর আপনার অন্তরে সৃষ্টি করবে এক অভাবিত অনুরণন। ক্ষণে ক্ষণেই আপনি শিহরিত হবেন আপনার জীবনে এ বাণীর প্রাসঙ্গকিতায়। মনে হবে আপনাকেই যেন কথাগুলো বলছেন তিনি। তাই পড়া শুরু করুন যে-কোনো পাতা থেকে। ডুবে যান বাক্যের গভীরে। আপনি পাবেন পথের দিশা। জীবন বাঁক বদলাবে। আপনার উত্তরণ ঘটবে উচ্চতর মানবে।’
গ্রন্থটিতে মোট ১২৬৮টি হাদীসের মর্মবাণীর সন্নিবেশ ঘটেছে। বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপন যেমন- জীবনদৃষ্টি, দান, ধর্ম, জবাবদিহিতা, কর্ম, পরিবার, জীবনাচার ও ধর্মাচার মোট আটটি ভাগে এবং তথ্য উৎস, বিদায় হজের মর্মবাণী, রেওয়াতকারীদের পরিচিতি, গ্রন্থপঞ্জি, নির্ঘণ্টসহ ৩৫২ পৃষ্ঠার অনবদ্য গ্রন্থটি আমাদের জাগতিক ও পারলৌকিক জীবনের জন্যে অনবদ্য এক সংযোজন।
শুরুতেই গ্রন্থকার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নবীজীর (স) সহযোদ্ধা, যারা ছিলেন নবীজীর বাণীর ধারক, সাহাবাদের পরের প্রজন্ম তাবিঈন, তাবে তাবিঈন ও তাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা এ হাদীস সংরক্ষণ করেছেন বিভিন্নভাবে।
‘শূন্য থেকে অনন্তে’ চার পৃষ্ঠায় গ্রন্থকার নবীজীর আলোকোজ্জ্বল জীবনের প্রতি সংক্ষেপিত বর্ণনায় বলেছেন, তাঁর বাণী সেকালের মতো একালেও সমভাবে অনুসরণীয়। তাঁর বাণী শুধু আধুনিকই নয়, বরং উত্তরাধুনিক।
বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় কয়েকটি হাদীসের উল্লেখ করা যায়
১. জীবনদৃষ্টি : প্রতিটি কাজ তুমি সবচেয়ে ভালভাবে করবে। এটাই আল্লাহর নির্দেশ।
২. দান : সততার সাথে দান সংগ্রহকারী ও দান বিতরণকারী দাতার মতোই সমভাবে পুরস্কৃত হবে।
৩. ধর্ম : ধর্মকে সহজ করার জন্যেই আমি প্রেরিত হয়েছি।
৪. জবাবদিহিতা : তুমি যদি অনুশোচনা ও ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে ক্লান্ত না হও, আল্লাহ কখনো ক্ষমা করতে ক্লান্ত বোধ করেন না।
৫. কর্ম : পরিমাপ ও ওজনে সতর্ক থাকো। মাপে কমবেশি করো না। পরিমাপে অসততায় অতীতে বহ জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
৬. পরিবার : পরিবারের সকলের প্রতি তোমার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করো।
৭. জীবনাচার : তোমার পাকস্থলীকে তিন ভাগে ভাগ করো। এক ভাগ খাবার দিয়ে পূর্ণ করো। এক
ভাগ পানি দিয়ে। আর বাকি এক ভাগ খালি রাখো, যাতে ভালোভাবে দম নিতে পারো।
৮. ধর্মাচার : হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
প্রতিটি বিষয়ভাগে বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনা এবং গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। শহীদ আল বোখারী মহাজাতক কর্তৃক এ গ্রন্থে উপস্থাপিত হাদীস শরীফের বাংলা মর্মবাণী চমৎকার সবুজ রঙের কভারে আচ্ছাদিত। বইটির প্রকাশক মায়িশা তাবাসসুম, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। প্রথম প্রকাশ মাহে রমজান ২০২১। হাদিয়া ৪০০ টাকা হলেও পাওয়া যাচ্ছে তিনশ টাকায়। ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে বইটি ডাউনলোড করে ফ্রি পড়া ও পরিচিতদের শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।